শববাহী গাড়ি দেয়নি Hospital, ৫০ কিমি রাস্তা বাইকে বেঁধে মায়ের মৃতদেহ নিয়ে এলেন ছেলে

মহানগর বার্তা ওয়েবডেস্কঃ হাসপাতাল(Hospital)। তাই বাধ্য হয়েই, মোটর বাইকে মায়ের মৃতদেহ নিয়ে, পঞ্চাশ কিলোমিটার যাত্রা করলেন ছেলে। একবিংশ শতকে যখন মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার তোরজোর চলছে, তখন মধ্যপ্রদেশের এই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়ে যায় আমাদের। প্রশ্ন তু্লে দেয় মানবিকতা নিয়ে। একদিকে মঙ্গল অভিযান হচ্ছে, অপরদিকে মৃতদেহ বহনের গাড়ি পাওয়া যাচ্ছেনা! এই বৈষম্য নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ মহল। যদিও এর আগেও অনেকবারই বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে সরকারী হাসপাতালের(Hospital) অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। সেখানকার হাসপাতালে ন্যূনতম পরিষেবাও পাওয়া দুষ্কর বলেই অভিযোগ বিরোধীদের। শাহদল হাসপাতালের সাম্প্রতিক ঘটনা সামনে আসতে, আরেকবার সরব হয়েছে সব মহলই। সংবাদ মাধ্যমে এই দৃশ্য প্রকাশ হতেই বর্তমান সময়ের মানবিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। সরকারী হাসপাতালে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মধ্যেই পড়ে। সেখানে মোটর বাইকে মৃতদেহ বহনের ঘটনা, নাড়িয়ে দিয়েছে সমাজবিদদের।
মধ্যপ্রদেশের(Madhyapradesh) অনুপুর জেলার বাসিন্দা জয়ামতি যাদব। বুকে অস্বস্তি বোধ করায়, বুকের সমস্যা নিয়ে তিনি ভর্তি হন অনুপুর জেলা হাসপাতালে(Hospital)। সেখানে তাঁকে পরীক্ষা করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতির ফলে অনুপুর জেলা হাসপাতাল থেকে তাঁকে পাঠানো হয় পার্শ্ববর্তী জেলা শাহদলে। শাহদল জেলা হাসপাতাল(Hospital) তথা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয় জয়ামতী দেবীকে। সেখানেই চিকিৎসা চলাকালীন মারা যান জয়ামতী যাদব। সংবাদ মাধ্যমকে এমনটাই জানিয়েছেন শাহদল হাসপাতালের একজন কর্মী।

মায়ের প্রয়াণের পরে, জয়ামতী দেবীর ছেলে চেষ্টা চালান শববাহী গাড়ি যোগার করার। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল(Hospital) থেকে তাদের বাড়ির দূরত্ব পঞ্চাশ কিলোমিটার। সেখানেই শেষকৃত্য করার জন্য শববাহী গাড়ির খোঁজ করতে থাকেন মৃতার ছেলে। কিন্তু মৃতার ছেলের দাবি, হাসপাতালে শববাহী গাড়ি পাওয়া যাবেনা বলে জানায় সেখানে কর্মরত কর্মীরা। তারপর তারা চেষ্টা চালান বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে দেহ বাড়ি নিয়ে আসার। কিন্তু সেই অ্যাম্বুলেন্সের অত্যধিক ভাড়ার কারণে পিছিয়ে আসে আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারটি। তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় মোটর বাইকেই(Two-wheeler) দেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে। একটি বিছানার চাদরে দেহ মুড়ে, বাইকের(Two-wheeler) সঙ্গে বেঁধে জয়ামতী যাদবের দেহ নিয়ে আসা হয় বাড়িতে। পঞ্চাশ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তাঁর ছেলে, মায়ের দেহ নিয়ে বাড়িতে আসেন। তারপর সেখানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় জয়ামতী যাদবের।
এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শোরগোল পড়ে গেছে মধ্যপ্রদেশ(Madhyapradesh) জুড়ে। বিরোধীরা আঙুল তুলতে শুরু করেছেন সরকারী হাসপাতালের অব্যবস্থার দিকে। প্রয়াণের পরে কেন একটা শববাহী গাড়ি যোগার করা গেলোনা হাসপাতাল (Hospital) থেকে, এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সরকারী অব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল (Hospital) কর্তৃপক্ষের দিকেও আঙুল তুলছে সবাই। হাসপাতাল (Hospital) কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে কেন কোন ব্যবস্থা নিতে পারলোনা, তার দিকে আঙুল তুলছেন অনেকেই। সেই সময়ে শববাহী গাড়ি হাসপাতালে (Hospital) না থাকলেও, কর্তৃপক্ষ যদি সচেষ্ট হতো, তাহলে গাড়ির ব্যবস্থা করা যেত বলে মত বিশেষজ্ঞদের। শাহদল জেলা হাসপাতাল তথা মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধাচরণেও ভরে উঠছে সামাজিক মাধ্যমের দেওয়াল।
অনেকেই শিউরে উঠেছেন এই ভিডিও দেখে। এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার, সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম থেকে যোগাযোগ করা হয় হাসপাতাল (Hospital) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। কিন্তু তাদের থেকে কোনোরকম সদুত্তর পাওয়া যায়নি। মানবিকতার প্রশ্নও তুলেছেন সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকে। কেন এই পরিস্থিতিতে বাইকে(Two-wheeler) বেঁধে মৃতদেহ নিয়ে যেতে হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
এর আগেও মধ্যপ্রদেশে(Madhyapradesh) একাধিকবার এরকম অভিযোগ সামনে এসেছে। বছর দুই আগেও এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী’র দেহ মাথায় করে প্রায় একদিনের পথ পাড়ি দেন, স্ত্রীর শেষকৃত্য করার জন্য। সঙ্গে তাঁর নাবালিকা মেয়েও ছিলো। সেই ঘটনারও প্রকাশ্যে আসার পরে দেশজুড়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলো। সেই সময়ে অভিযোগ ছিলো, দলিত বলে ওই ব্যক্তিকে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই সময়েও বিরোধীরা তোপ দেগেছিলেন মধ্যপ্রদেশের(Madhyapradesh) সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুরাবস্থা ও বৈষম্য নিয়ে। জয়ামতী যাদবের ঘটনার প্রসঙ্গেও অনেকের মনে পড়ে যাচ্ছে বছর দুই আগের সেই ঘটনা।
রাজনৈতিল বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনায় রাজনৈতিক টানাপোড়েনের থেকেও বেশি উঠে আসে মানবিকতার প্রশ্ন। সামাজিক অবক্ষয় কি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে! মানবিকতা কি মৃত! একটা সরকারী মেডিক্যাল কলেজ, সেখানে কেন শববাহী গাড়ির বন্দোবস্ত হলোনা! প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্ট মহল। বাইকে(Two-wheeler) মৃতদেহ বহন করার ঘটনায় আঁতকে উঠছেন অনেকেই। এই নজির দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং মানবিকতার জন্য ভালো বিজ্ঞাপন নয় বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
এখন দেখার, এই ঘটনার পরে সরকারী স্বাস্থ্য আধিকারিকদের টনক নড়ে কিনা! পরিবর্তন হয় কিনা এই অব্যবস্থার! এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে নাকি, অবস্থার উন্নতি হবে, সেটাই দেখার বিষয়।

