৩০০ বছরের পুরোনো ফলহারিনী কালীপুজো, জড়িয়ে আছে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও

মহানগরবার্তা ওয়েবডেস্ক: দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই রাজ্য জুড়ে শুরু হয়ে গেছে দীপাবলির তোড়জোড়। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ এখনও নির্মূল না হলেও বাংলার মানুষের উৎসবের আমেজে ভাঁটা পড়ে নি। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী করোনা আবহে এবার কালীপুজোয় আতশবাজি নিষিদ্ধ। কিন্তু তাতেও খুব একটা দমে নি উৎসবপ্রিয় মানুষ। বাজির উল্লাস ছাড়াই সপ্তাহান্তে দীপাবলিতে মেতে ওঠার জন্য শুরু হয়েছে প্রস্তুতি।
রাজ্যে কালীপুজোর ইতিহাস ঘাঁটলে যে সমস্ত প্রাচীন পুজোর নাম উঠে আসে তার মধ্যে অন্যতম হল হাওড়ার ব্যানার্জী বাগান সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির কালীপুজো। এই পুজোর সঠিক সূচনা জানা যায় না, তবে অনুমান করা হয় প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ বছরের পুরোনো এই কালীপুজো। বস্তুত, উত্তর হাওড়ার সালকিয়া অঞ্চলের প্রাচীন জমিদারের আমল থেকেই চলে আসছে এই পুজো। জানা যায়, গীতিকার পুলক বন্দোপাধ্যায়ের পূর্ব পুরুষ ছিলেন এই অঞ্চলের এক কালের প্রতাপশালী জমিদার। তাঁদের আমলেই শুরু হয়েছিল ব্যানার্জী বাড়ির কালীপুজো। তবে এই পুজো সূচনার পিছনে লুকিয়ে আছে এক রোমাঞ্চকর ইতিহাস, যা আজও বিস্ময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভক্তির উদ্রেক করে আপামর জনগণের মনে। বিশেষত, আজকের বিশ্বজোড়া অতিমারীর মাঝে এই পুজোর ইতিহাস যেন বয়ে আনে খানিক অভয় বার্তাও।
কী সেই ইতিহাস? শোনা যায়, সালকিয়া অঞ্চলের এই জমিদার বাড়িতে নাকি বেশ জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপুজোর প্রচলন ছিল। সে সময় ওই অঞ্চলে অন্য বিশেষ কোনো পুজো হতো না। দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে বছরে ওই একটি বারের জন্যই নাকি জমিদার বাড়ির দরজা খোলা হত এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য। কিন্তু সালকিয়ার অধিবাসীদের শান্তিপূর্ণ জীবনে আচমকাই দেখা দেয় মহামারীর কালো ছায়া।
হঠাৎ মহামারী এবং দুর্ভিক্ষের প্রকোপে বহু মানুষ না খেতে পেয়ে অনাহারে মারা যেতে থাকেন। এমনকি প্রাণরক্ষার জন্য অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলেও যেতে থাকেন। দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে জমিদারের কপালে। স্থানীয় ইতিহাসে কথিত আছে, ঠিক এমনই এক দুঃসময়ে মা মহামায়া কালীরূপ ধারণ করে স্বর্গ হতে মর্ত্যে নেমে আসনে। মা নাকি জমিদারকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে তাঁর ফলহারিনী রূপের পুজোর নির্দেশ দেন। এমনকি তিনি এও বলেন যে, ব্যানার্জী বাগান অশ্বত্থতলা সংলগ্ন পুকুর থেকেই উঠে আসবে তাঁর গয়না ও পুজোর বাসনপত্র!
বলা বাহুল্য, স্বপ্নাদেশ মিলে যায় অক্ষরে অক্ষরে। পুজোর ঠিক আগের দিনই একটি কাগজে যা যা গয়না ও বাসনপত্র লাগবে তা লিখে সেই পুকুরের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পুজোর দিন এলাকার বাসিন্দারা সাক্ষী থাকেন সেই অলৌকিক ঘটনার। পুকুরের ঘাট ভর্তি হয়ে থাকে গয়না ও বাসনপত্রে। মহা ধুমধামের সঙ্গে শুরু হয় জমিদার বাড়ির ফলহারিনী কালীপুজো।
আজ সালকিয়া ও হাওড়ার অন্যান্য অঞ্চলে ছোট বড় নানা পুজোর ভিড়ে হারিয়ে গেছে ফলহারিনী মায়ের পুজো। তবে ব্যানার্জী বাগান সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি আজও এই পুজো চালিয়ে যাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের করাল গ্রাসের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে আজও ভক্তদের ভরসা সেই ফলহারিনী মায়ের উপরেই।