আম জনতার আদালত: রিয়া চক্রবর্তী ও আরিয়ান খান

অর্পন চক্রবর্তী
সাম্প্রতিক অতীতে একটা ঘটনা যা হয়তো বলিউডে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে তা হলো বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু। এই মৃত্যু যেন যে সে মৃত্যু নয়! জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে- এই চিরন্তন সত্যের ধার না ধারা এই মৃত্যু। সুশান্ত যেন তাঁর মৃত্যুর পর নতুন জীবন পেয়েছিলেন,তাঁর ভক্তকুলের মৃত্যু রহস্য উন্মোচনের আন্দোলনের মাধ্যমে। তাতে লাভ কি হয়েছে? সত্য কি এখনও প্রমাণিত হয়েছে? যদিও কিছু লাভ হয়ে থাকে সে বিতর্কের বিষয়। কিন্তু ক্ষতি হয়েছে বিস্তর। সমাজের, নারীদের, শিক্ষার, সাংবাদিকতার এবং সর্বোপরি একজন মহিলার যিনি ঘটনাচক্রে সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রাক্তন প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী।
গোটা ঘটনায় নিউজরুম গুলো হয়ে উঠেছিল আদালত আর নির্লজ্জ কিছু সাংবাদিক নিজেদের ভেবে ফেলেছিলেন বড়ো গোয়েন্দা। সিসিটিভির মতো রিয়ার গাড়ি, তাঁর পরিবারের লোকজনদের পিছু ধাওয়া করতেন সাংবাদিকরা। তখন নাকি মিডিয়া হাউসগুলোতে সাংবাদিকদের বিশেষ ক্লাস নিতেন হাউসের সিনিওর রিপোর্টাররা কিভাবে তিলকে তাল করা যায়। রিয়ার আবাসনে ধুলো পাওয়া গেলেও সেটাকে কিভাবে দেখাতে হবে ড্রাগস হিসাবে, জল পাওয়া গেলেও মদ হিসেবে এমনই নিদান ছিল যেন উপরমহলের। আর হ্যা মহিলারা যে কত খারাপ একজন পুরুষের জীবনে! তাদের সারাদিনের কাজ কালাজাদু করা, প্রেমিকের পয়সা ধংস করে ফুর্তি করা এসব নিয়ে গবেষণা চলতে থাকলো। মহিলা সাংবাদিকরাও এগুলো কোনো লজ্জা ছাড়াই বলতে ও দেখাতে লাগলেন। আর এই মিডিয়ার তৈরি ন্যারেটিভে উচ্ছন্নে যাওয়া নারীজাতির আইকন বানিয়ে ফেলা হলো রিয়া চক্রবর্তীকে। উদ্দেশ্য একটাই যে করে হোক প্রমাণ করে দিতে হবে সুশান্তের মৃত্যুর পিছনে চক্রান্তের হাত রিয়ার।
এত কিছুর পরে রিয়া গ্রেফতার হলেন জামিনও পেলেন। সবথেকে হাস্যকর এটাও প্রমাণ হয়ে গেল যে সুশান্তের মৃত্যুর পিছনে তাঁর কোনো হাত নেই বরং সে নিজে সুশান্তের মৃত্যুতে কষ্ট পেয়েছে। আইনের চোখে রিয়া এখন নির্দোষ কিন্তু সমাজের চোখে? সমাজ কিন্তু এখনও মনে করে রিয়া দোষী। এখনও তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে শুনতে হয় তিরস্কার, গালাগাল। কারণ সমাজকে বোঝানো হয়ে এসেছে একজন পুরুষের জীবনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে একজন নারী। জনতার আদালতে আসলে নারীদের ভিলেন সাজিয়ে দেওয়াটা খুব সহজ।আর রিয়ার ক্ষেত্রে এটা আরো ব্যাপক ছিল। সবচেয়ে মজার ব্যাপার রিয়াকে কিন্তু সুশান্তের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়নি বরং গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তার কাছ থেকে মাদক পাওয়ার দরুণ। সেকথা সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জানেনই না যারা সেসময় রিয়াকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
ঠিক তেমনই সাম্প্রতিক আরেক গ্রেফতারের কথাও যদি বলা যায় এবং সেটাও মাদক সংক্রান্ত। তাতে অবশ্যই উঠে আসবে আরিয়ানের কথা। বলিউডের বেতাজ বাদশা শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানের কথা। আরিয়ানও ড্রাগস রাখার অপরাধে গ্রেপ্তার হলেন আবার জামিনও পেলেন। রিয়ার মত আরিয়ানের সময়ও মহামান্য আদালত বললেন কোনো রকম বড়ো চক্রান্ত কিংবা ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিলেন না তিনি। এতসবের পরেও রিয়া আর আরিয়ানের মধ্যে তফাৎ হলো লিঙ্গের। যার জন্য আরিয়ান গ্রেফতার হলে প্রশ্ন ওঠেনা সমগ্র পুরুষ জাতি কেন নেশা করেন? নেশায় অভ্যস্ত পুরুষরা কি আদৌ সমাজের জন্য প্রগতিশীল? শুধু মহিলাদের সময় সব কিছু যেন অস্বাভাবিক, তিল থেকে তাল। আর পুরুষদের সময় সব কিছু স্বাভাবিক। সমাজের কাছে ‘করতেই পারে ইচ্ছে হয়েছে তাই করেছে।’