প্রকৃত যোদ্ধা! বহু সেনার প্রাণ বাঁচিয়ে নিজে শহীদ হলেন ‘বীর’ সেনা কুকুর(Army Dog)

মহানগর বার্তা ওয়েবডেস্কঃ সেনাবাহিনী অথবা পুলিশ বিভাগের অন্যতম হাতিয়ার তাদের ‘ডগ স্কোয়াড’। সেনার যে কোনো জরুরী অভিযানের সেনায় কর্মরত কুকুর(Army dog) থাকেই। সেনা বাহিনীর এই ‘ডগ স্কোয়াড’ নিয়ে বহু কাহিনী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চতুর্দিকে। বহু আত্মবলিদান আর বীরত্বের কাহিনী রয়েছে সেনায় কর্মরত কুকুরদের নিয়ে। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত এইসব কুকুরদের ভূমিকা সেনা অভিযানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত আগ্নেয়াস্ত্র খোঁজা, কিংবা লুকিয়ে থাকা অপরাধীর খোঁজে দক্ষ হয় এই ধরণের কুকুররা। অনেকটা তাদের ওপর ভরসা করেই প্রাথমিক অভিযানের কাজটা করেন সেনা আধিকারিকরা। যে কোনো অভিযানের প্রাথমিক নকশা তৈরিও হয় প্রশিক্ষিত কুকুরদের সামনে রেখেই। একটা অভিযান ঠিক কীভাবে এগোবে, তার অনেকটাই ঠিক করা হয় এইসব কুকুরদের(army dog) প্রাথমিক সংকেত থেকে। কোনখানে বোম আছে, বা অপরাধী ঠিক কোথায় লুকিয়ে আছে, তার প্রাথমিক হদিশ দেয় এইসব কুকুররাই। এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বহু কুকুরের প্রাণ গেছে, আবার চিরদিনের মতো অথর্ব হয়ে গেছে অনেকেই। তবুও সেনার কাজের গুরুত্বপূর্ণ ভরসাস্থল প্রশিক্ষিত কুকুরদের বিশেষ বাহিনী। দীর্ঘ প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দক্ষ হয়ে ওঠে এইসব কুকুররা। বহু গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের সঙ্গী হয় এই কুকুর বাহিনী(army dog)। তাদের ঘ্রাণশক্তি এবং বুদ্ধিমত্তা বহু বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে সেনাকে। কর্তব্যনিষ্ঠ এইসব যোদ্ধা কুকুররা(warrior dog) নিজেদের জীবনকে বিপন্ন করেই এগিয়ে যায় ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে।
কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলায় সন্ত্রাস দমন অভিযানে(counter-terrorism operation) যায় সেনা। খবর ছিলো বারামুল্লার একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে বেশ কিছু সন্ত্রাসবাদী। অভিযানে প্রাথমিক কাজের ভার পরে সেনায় কর্মরত কুকুরদের(Army dog) ওপর। সেখানেই গুলি লাগে অ্যাক্সেল(Axel) নামে যোদ্ধা কুকুরটির(Warrior dog)। দুই বছরের অ্যাক্সেল(Axel) বেলজিয়াম ম্যালিনয়িস প্রজাতির কুকুর।

সেনা সূত্রে জানা গেছে, বারামুল্লা জেলার ওয়ানিগাম বালা গ্রামের একটি বাড়িতে কয়েকজন সন্ত্রাসবাদীর লুকিয়ে থাকার খবর পাওয়া যায়। সেখানেই সন্ত্রাস দমনে(counter-terrorism operation) যায় সেনা। প্রথমে বাজাজ নামে একটি কুকুর নিরীক্ষণ চালায় ঘরগুলোতে। তারপরে অ্যাক্সেল(Axel) প্রথম ঘরটা নিরীক্ষণের পরে দ্বিতীয় ঘরে ঢোকে। সেখানেই লুকিয়ে ছিলো একজন সন্ত্রাসবাদী। অ্যাক্সেল(Axel) ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই সে গুলি চালিয়ে হত্যা(killed) করে। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে জানা গেছে, গুলিটা তার পাঁজর ভেদ করে চলে যায়।
অ্যাক্সেল(Axel) এর ওপর গুলি চালানোর পরেই, সেনাও গুলি চালাতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ গুলি বিনিময়ের পরে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে সেনার। তারপর উদ্ধার করা হয় যোদ্ধা কুকুর(warrior dog) অ্যাক্সেল(axel) এর নিথর দেহ। সেনা সূত্রে জানা গেছে, অ্যাক্সেল(axel) এর প্রশিক্ষকও ওই গুলির লড়াইয়ে আহত হয়েছেন।
সেনার কর্মরত কুকুর(army dog) হিসাবে অ্যাক্সেল(axel) প্রায় দশবার আহত হয়েছে। এছাড়াও পায়ের একটি হাড়েও মারাত্মক চোট আছে তার। তা সত্ত্বেও দুই বছরের এই যোদ্ধা কুকুরটি(warrior dog) সাহসিকতার সঙ্গে পুরোদস্তুর সহযোগিতা করে গেছে সেনা অভিযানে।
সেনা আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, অ্যাক্সেল(axel) এর সাহসিকতার জন্যই এই অভিযানে যুক্ত বহু সৈনিকের প্রাণ বেঁচেছে। যদি না জেনেই তারা দ্বিতীয় ঘরে ঢুকে পড়তো তাহলে, অনেকের প্রাণসংশয়ের সম্ভাবনা ছিলো। কিন্তু অ্যাক্সেল(axel) প্রথম ওই ঘরে ঢুকে পড়ায়, বাকিরা প্রাণে বেঁচে যায়।
এই নির্ভিক সাহসী যোদ্ধা কুকুরটি(warrior dog) গতমাসেই দুই বছরে পা দিয়েছিলো। ২৯ রাষ্ট্রীয় রাইফেলের অংশ হিসাবে, ২৬ আর্মি ডগ স্কোয়াডে কর্মরত ছিলো অ্যাক্সেল(Axel)।
সেনায় কর্মরত এই কুকুরটির(Army dog) শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় রবিবারেই। ১০ সেক্টর রাষ্ট্রীয় রাইফেলের সদর দপ্তরেই শায়িত হয় অ্যাক্সেল(Axel) এর দেহ। তার শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল এস এস স্লারিয়া এবং জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ বিভাগের আধিকারিকরা। ২৬ আর্মি ডগ ইউনিট(ADU) এবং অ্যাক্সেলের(Axel) প্রশিক্ষকও তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। অবশেষে ২৬ আর্মি ডগ ইউনিট(ADU) এর দপ্তরের চত্বরেই কবর দেওয়া হয় অ্যাক্সেলকে(Axel)।
এর আগেও বারামুল্লা হাইওয়েতে ২৯ রাষ্ট্রীয় রাইফেলের ২৯ জন সেনার প্রাণ বাঁচায় কনক নামে সেনায় কর্মরত (Army dog) একটি কুকুর। হাইওয়েতে থাকা প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করে কনক। সেইসময়েও সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে এই যোদ্ধা কুকুরের(warrior dog) কীর্তি। আবারও সেই বারামুল্লাতেই সেনার প্রাণ বাঁচিয়ে, নিজের জীবন দিলো আরেকটি সেনা কুকুর(Army dog)। বারবার সেনায় কর্মরত কুকুররা(Army dog) তাদের জীবন দিয়ে রক্ষা করছে বাকিদের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এরা এগিয়ে যায় বিপদের দিকে। কখনো বোম, কখনো শত্রুর গুলি, তবু কর্তব্যে অটল এইসব নির্ভিক যোদ্ধা কুকুররা(warrior dog)। এদের এই আত্মবলিদান ও সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানায় সোনাবাহিনীও। এদের শেষকৃত্যও সম্পন্ন হয় সামরিক মর্যাদাতেই। এমনকি এইসব সেনা কুকুররা(Army dog) অবসরের পরে পেনশনও পান। অ্যাক্সেলের(Axel) এই আত্মবলিদান আবার নজির গড়ে দিলো যোদ্ধা কুকুরদের(warrior dog) সাহসিকতাপূর্ণ বীরত্বের।

