প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করেও পাননি যোগ্য সম্মান, চলে গেলেন নেতাজির সৈনিক

মহানগর বার্তা ওয়েবডেস্কঃ নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য এখনও অজানাই, কিন্তু তাঁর প্রতি দেশের মানুষের ভক্তি কখনো কমে না এক চুলও। নেতাজির রক্তের বদলে স্বাধীনতার ডাককে উপেক্ষা করতে না পেরে যাঁরা দেশের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেই আজাদ হিন্দ বাহিনীও বাঙালি তথা ভারতবাসীর বড় কাছের। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীন ভারত কতটা মনে রেখেছে নেতাজির সেই বীর সৈনিকদের? কতটা সম্মান দিয়েছে তাঁদের সাধের স্বাধীন ভারতবর্ষ? আজাদ হিন্দ ফৌজের অন্যতম সেনানী রামবিলাস মাহাতোর মৃত্যু তুলে দিল অনেক প্রশ্ন।
একদিন নেতাজির ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণপণ করেছিলেন বিহারের পুর্ণিয়া জেলার বাসিন্দা রামবিলাস মাহাতো।দীর্ঘদিন ধরে সেই বাহিনীর হয়ে লড়াই করেছিলেন তিনি। কিন্তু স্বাধীন ভারতে আর তাঁকে কেউ মনে রাখেনি। পেনশনের জন্য বহু দরজায় ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল তাঁকে। কোথাও নিজের যোগ্য সম্মান টুকু পান নি রামবিলাস মাহাতো। অবশেষে দীর্ঘ সংগ্রামের পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি।
জানা গেছে, রামবিলাস মাহাতো বিহারের কিশনগঞ্জের পুঠিয়ারা ব্লকের মতিহারা গ্রামের বাসিন্দা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১১২ বছর। জীবনের মতো মৃত্যুতেও তাঁর কপালে জুটেছে অবহেলা আর অবজ্ঞা। মৃত্যুর পরেও তাঁর প্রতি কোনোরকম সম্মান প্রদর্শনের বা সৌজন্যতা দেখানোর প্রয়োজন অনুভব করেনি রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে প্রশাসন, কেউই।
রামবিলাস মাহাতোর ছেলে কানাইয়া মাহাতোর বয়স হয়েছে ৮০ বছর। বাবার মৃত্যুর পর তিনি জানিয়েছেন প্রায় এক বছর ধরে তাঁর বাবা অসুস্থ ছিলেন। কারোর কাছ থেকে তাঁর বাবা কোনো সম্মান না পাওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন কানাইয়া মাহাতো। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৪৫ সালে নেতাজির ডাকে আরা জেলার উত্তরদাহ গ্রামের প্রায় ৫০ জন নবযুবক রেঙ্গুনে আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগ দেন। এই ৫০ জনের মধ্যে সেই গ্রামের তরুণ রামবিলাসজিও ছিলেন। তাঁরা সুদূর বিহার থেকে রেঙ্গুনে চাকরি করতে যান।কানাইয়া বাবুর কথায়, “বাবার মুখে শুনেছি রেঙ্গুনের জিয়াবাড়ি চিনি মিলের ক্যাম্পাসে নতুন রিক্রুটদের ট্রেনিং সেন্টার ছিল। নেতাজিও মাঝেমধ্যে এই ক্যাম্পে আসতেন। এমনকি তাঁরা যুদ্ধেও শামিল হন।”
এরপরের ঘটনা অবশ্য সকলেরই জানা। প্রবল বর্ষা ও জাপানের অসহযোগিতার ফলে আজাদ হিন্দ ফৌজ পরাজিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈনিকদের স্বাধীন ভারত সরকার কোনও সুযোগসুবিধা দেয়নি। সত্তরের দশকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির উদ্যোগে সমুদ্রপথে রামবিলাসবাবু সমেত ১৬টি পরিবারকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপরই ১৬ বার্মিজ রিফিউজি পরিবারকে রায়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধূমনিয়া গ্রামে তিন একর জমির বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। আজ তা জেলায় বার্মিজ বাস্তুহারা কলোনি নামে পরিচিত। এদিন রামবিলাস বাবুর মৃত্যুতে প্রশাসনের তরফ থেকে উদ্যোগ না দেখা গেলেও তাঁর বাড়ির কাছে উপচে পড়েছিল সাধারণ গ্রামবাসীদের ভিড়।