বাসস্টপে সময় কাটান বই পড়ে, অভিনব লাইব্রেরীর উদ্যোগ কলকাতার তরুণের

মহানগর বার্তা ওয়েবডেস্কঃ বইপোকা মানুষদের কাছে ‘স্ট্রিট লাইব্রেরী’ শব্দটা ভীষণ পরিচিত। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বই পড়তে পছন্দ করেন এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। সেইসব মানুষদের জন্য কলকাতার জোড়া গির্জা বাসস্টপে সেল্ফ ভর্তি বইয়ের ব্যাবস্থা করার পরিকল্পনা আলিমুদ্দিনবাসী তৌসিফ রহমানের।
বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করার সময় বহু মানুষকে দেখা যায় সাধারণত মোবাইল ফোনে মুখ গুজে থাকতে। কিন্তু এবার তৌসিফের হাত ধরে খুলে গেল সময় কাটানোর এক অন্য পরিসর। রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে থাকতে কিংবা বাসের অপেক্ষা করার মাঝে কিছুক্ষণের জন্য এক কাপ চায়ের সাথে একটা ছোট গল্প পড়ে নিতে পারবে পথচলতি মানুষ। এইভাবে মানুষ কিছুটা মুঠোফোনের নীল আলো থেকে বিরতি পাবে সাথে বই পড়ার অভ্যাসও বজায় রাখা থাকবে। আপাতত পুরাতন বই দিয়ে তৌসিফের এই ‘প্রতিক্ষালয় লাইব্রেরী’র পথ চলা শুরু হতে চলেছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ধরনের বইয়ের পাশাপাশি রোজকার খবরের কাগজও সেখানে রাখার পরিকল্পনা করছেন তিনি। বই কেনা এবং সেগুলো রাখার জন্য সেল্ফের খরচ তিনি করলেও অনেকের কাছে লাইব্রেরীর জন্য নিজেদের পুরোনো বই দানেরও আবেদন করেছেন তিনি। পাশাপাশি সেখানে একাধিক ভাষার বই রাখার চিন্তাভাবনা করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরে এপ্রিল মাসে কলকাতাবাসীদের গরমের হাত থেকে রেহাই দিতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এ ফ্রিজের ব্যাবস্থা করেন তিনি। সেই ফ্রিজে স্থানীয় বহু মানুষ জল ঠান্ডা করার জন্য বোতল রেখে দিয়ে যেতেন আবার কেউ বরফের জন্যও ব্যবহার করতেন সেই ফ্রিজ। রাস্তায় থাকা ফ্রিজের নিরাপত্তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগলেও তৌসিফ প্রথম থেকেই নিশ্চিত ছিলেন যে, সাধারণ মানুষের ব্যাবহারের জিনিস কেউ চুরি করবে না।
এই লাইব্রেরী তৈরীর ক্ষেত্রেও তৌসিফের বক্তব্য “বইপ্রেমীরা বাস স্টপে বই রাখার গুরুত্ব বুঝবেন। আর এই বইও তো মানুষের জন্যই, তাই কেউ চুরি করবেনা।” তার এই বিশ্বাসের জোরেই তালা চাবির কোনো ব্যাবস্থা তিনি করেননি। আর মানুষকে বিশ্বাস করা তো অন্যায় নয়, এই নীতিতেই বিশ্বাসী এই আলিমুদ্দিনবাসী।
বর্তমানে কর্ণাটক সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন বিভাগের উদ্যোগে বাস টার্মিনালে যাত্রীদের পড়ার জন্য বই রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে রাজ্য সরকার ট্রামের মধ্যে চলন্ত লাইব্রেরী খোলার উদ্যোগ নেন। আপাতত কলকাতার একটি স্টপে বই রেখে দেখতে চাইছেন তিনি। এই উদ্যোগের গ্রহণযোগ্যতা আশানুরূপ হলে মেয়রের কাছে তিনি আবেদন করবেন যাতে আরও জায়গায় এই উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়।