নিজের পরিচয়ে গর্বিত! বাড়ির নাম ‘চামার ভবন’ রাখলেন দলিত ব্যক্তি, কুর্নিশ নেটিজেনদের

মহানগরবার্তা ওয়েবডেস্ক: জাতপাত বর্ণভেদ প্রাচীন কাল থেকেই ভারতবর্ষীয় সমাজের এক অন্যতম প্রধান সমস্যা। ২০২০ সালের ভারতবর্ষে, যখন সমাজের তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষের উপর নানা অত্যাচার নিপীড়নে ছবি বারবার উঠে আসে শিরোনামে, তখনই সামনে এল এক নজিরবিহীন ঘটনা। দেশের সমস্ত তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষ, নিজেদের জন্ম পরিচয়ের জন্য সমাজ যাঁদের লজ্জিত হতে বাধ্য করেছে নিঃসন্দেহে তাঁরা এই ঘটনা থেকে প্রেরণা লাভ করবেন।
নিজের জন্মগত আত্মপরিচয় যে কখনো লজ্জার কারণ হতে পারে না, তা যে সবসময়েই গর্বের বিষয়, এই দেশেরই এক নিম্নবর্ণের ব্যক্তি নিজের কাজের মাধ্যমে দিলেন সেই বার্তা। নিজের বাড়ির নাম তিনি রাখলেন ‘চামার ভবন’। বাড়ির নামের মধ্যে দিয়েই যাতে তাঁর জাত, বর্ণ বোঝা যায় সেই কারণেই এই কীর্তি। এই কাজের মাধ্যমে তিনি সমাজকে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন নিজের বর্ণ বা জাতের পরিচয়ে তিনি গর্বিত।
Why this Dalit man wants to be called "Chamar"?
He named his house "Chamar Bhavan."
And his son named their Wifi Chamar Bhavan.
Listen to full form of CHAMAR. pic.twitter.com/ZkdIxzGMGO— Sandeep Singh (@PunYaab) December 30, 2020
জানা গেছে, ওই ব্যক্তির নাম সর্বজিৎ পাল চামার। তিনি যে শুধু তাঁর বাড়ির নাম ‘চামার ভবন’ রেখেছেন তাই নয়, তাঁর ছেলে তাঁদের ওয়াই ফাই-এর নামকরণের ক্ষেত্রেও ওই একই নাম ব্যবহার করেছেন। সর্বজিৎ পাল চামার একটি ভিডিও বার্তায় নিজের কাজের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুহূর্তে ভাইরাল হয়েছে সেই ভিডিও।
২ মিনিটের ওই ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে সর্বজিৎ পাল চামার বলছেন বাকিদের মতো নিজের পরিচয়ের জন্য তিনি লজ্জিত নন, বরং তা নিয়ে তিনি গর্বিত। তিনি বলেন, সমাজে অন্যান্য ধর্ম বা জাতির মানুষ যেমন সম্মানিত হন, চামারদেরও সেই সম্মান পাওয়া উচিত।
বস্তুত এ দেশে জাতিভেদ, বর্ণভেদের ঘৃণ্য প্রথা ‘চামার’ শব্দটিকে অপমানসূচক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এমনকি বর্তমানে এটি একটি গালাগালিতেও পরিণত হয়েছে। এই ব্যবস্থাই বদলে দিতে চান সর্বজিৎ পাল চামার।ভিডিওতে তাঁর মতোই ‘চামার’ পদবীওয়ালা বাকিদেরকেও নিজের পরিচয়কে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এই নাম থেকেই তিনি শক্তি পান, তাই এই নামকেই তিনি বাড়ির নাম করেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতের নানা প্রান্ত থেকেই তথাকথিত উচ্চবর্ণের দ্বারা নিম্নবর্ণের পীড়নের ঘটনা সামনে আসে প্রায়সই। কখনো খাবারের থালা ছুঁয়ে ফেলার জন্য বেধড়ক মার খেতে হয় দলিত যুবককে, কখনো বা মূত্র পান করতে বাধ্য করা হয়। গত কয়েক বছরে নিম্নবর্ণের প্রতি অত্যাচারের পরিমাণ যেন বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এমতাবস্থায় সর্বজিৎ পাল চামারের বার্তা সমাজের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।