প্রদীপ জ্বালাতে বলেছিলেন মোদি, বাজি ফাটিয়েছিল মানুষ, তখন দূষণ হয়নি?

মহানগরবার্তা ওয়েবডেস্ক: দুর্গাপুজোর পর করোনা আবহে রাজ্যে কালীপুজোর আয়োজনেও বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এবছর কালীপুজোয় বাজি পোড়ানো যাবে না একেবারেই, এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। শুধু কালীপুজো নয়, ছটেও এবছর থাকবে না কোনো আতশবাজির উল্লাস। এমনকি বাজি বিক্রিতেও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
উচ্চ আদালতের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই। বলা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে বাজিহীন কালীপুজো নিয়ে মোটের উপর ‘সন্তুষ্ট’ রাজ্যবাসী। অথচ কয়েক মাস আগেই কোভিডের সূচনাকালে কিন্তু ছবিটা ছিল কিছু ভিন্ন। গত ৫ এপ্রিল সদ্য করোনা আক্রান্ত রাজ্যের বুকে নেমে এসেছিল ‘অকাল দীপাবলি’। সেদিনের কথা কি ভুলে গেছে সাধারণ মানুষ? নাকি দীর্ঘ ৮ মাস বাদে,৭১২২ টা প্রাণ হারিয়ে অবশেষে ‘সচেতন’ হয়েছে তাঁরা?
মূলত, কালীপুজোর সময় যথেচ্ছ বাজি পোড়ানোর ফলে রাজ্য জুড়ে যে বিপুল বায়ু দূষণ হয়, করোনা আবহে এবার সেই পরিস্থিতিই এড়াতে চেয়েছে হাইকোর্ট। বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি করে, বাজির দূষণে সেই ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।প্রবল হতে পারে শ্বাসকষ্ট। কিন্তু এই সম্ভাবনা গুলোর কথাই এপ্রিলের জনগণের মনে আসে নি কেন? প্রশ্ন ওঠে।
গত ৫ এপ্রিল দেশ জুড়ে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাত ৯টায় ৯ মিনিটের জন্য বাড়ির আলো বন্ধ রেখে প্রদীপ কিংবা মোবাইলের আলো জ্বালানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই আহ্বানে অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে গিয়ে কিছু মানুষ প্রদীপের বদলে জ্বালিয়েছিল বাজি। ৯ মিনিটের বদলে প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলেছিল দেদার শব্দবাজির দাপট। এমনকি মোট ৯৮ জনকে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে গ্রেফতারও করা হয়েছিল সেদিন। পরিবেশবিদদের মতে, গোটা রাজ্যে সেদিন প্রায় ৬ কোটি টাকার বাজি পুড়েছিল, দূষণের মাত্রা বেড়েছিল প্রায় ৬ গুণ, আর রাজ্যে মোট সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা সেদিন ছিল মাত্র ৪৯।
এখানেই শেষ নয়, দেশ জুড়ে মৃত্যু মিছিলের মাঝে সেদিনের অতি উৎসাহী জনতার সেই ভিত্তিহীন উল্লাসের সমর্থনে মুখ খুলেছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও। “বাজি ফাটানোর মধ্যে তো অন্যায়ের কিছু নেই। মানুষ একটু আনন্দ করুক”, বলেছিলেন তিনি।
আজ, হাইকোর্টের কালীপুজো সংক্রান্ত নির্দেশের দিন রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার ছুঁইছুই। লকডাউনের বিভীষিকা পেরিয়ে আনলক প্রক্রিয়ায় এখন স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার পথে মানুষ। আদালতের নির্দেশ তাঁরা মেনে নিয়েছেন বিনা প্রতিবাদে।করোনা কি তবে এতদিনে প্রমাণ করতে পেরেছে নিজের সর্বনাশী অস্তিত্ব? বলা বাহুল্য, উত্তর মিলবে ‘বাজিবিহীন’ দীপাবলিতেই।