সাঁওতালি ভাষায় কাজ বন্ধ করবো না: অভিনেত্রী ডগর টুডু

পেশায় অভিনেত্রী এবং গায়িকা। সাঁওতালি শিল্পী ডগর টুডু এবছর খেতাব জিতেছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর। রায়গঞ্জের দক্ষিণ সোহারই গ্রামের পরিবেশ ও জাতীয় সড়কের পাশে থাকা একটি অনাথ আশ্রমের প্রেক্ষাপটে তৈরি করা হয়েছিল সাঁওতালি চলচ্চিত্র ‘আশা’। সেই সিনেমাতে অভিনয় করেই দ্বাদশ দাদাসাহেব ফালকে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২২-এ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কারও পেয়েছেন ডগর টুডু। আর এই সাফল্যের মুহূর্ত ভাগ করে নিলেন তিনি আমাদের সাথে। মহানগর বার্তার প্রতিনিধি সায়নী ওঝা’কে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার দিলেন অভিনেত্রী ডগর টুডু।
প্রশ্ন: গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার মতনই পুরুলিয়া দিয়ে দিল্লী ঘিরলেন আপনি। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়ে প্রথম অনুভূতি কেমন?
উত্তর: সত্যি বলতে প্রথমে আমার বিশ্বাস হয়নি। যেখানে ফারহান আখতারের মতন মানুষ সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন সেখানে আমি সেরা অভিনেত্রী হিসেবে এই পুরস্কার পাচ্ছি, এটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। তবে এই পাওয়াটা আমার থেকেও আমার মায়ের কাছে অনেক বেশি কিছু। এতদিন ধরে গ্রামের মানুষদের এত বাঁকা কথা শুনে এসেছেন তিনি। এখন আমার নামে তারাই ভালো কথা বলেছেন। তাতে আমার মা খুব খুশি।
প্রশ্ন: কাছের মানুষ, বন্ধু বান্ধবীদের থেকে কি বার্তা পেয়েছেন?
উত্তর: বার্তা বলতে সবাই অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমার যারা কাছের মানুষ তারা অনেকদিন ধরেই সাপোর্ট করে চলেছেন। আশা করছি আরো ভালো কাজ যাতে করতে পারি তার জন্য তারা উৎসাহ দেবেন।
প্রশ্ন: অভিনেত্রী হিসেবে শুধুমাত্র কি সাঁওতাল ভাষায় সিনেমা করার ইচ্ছে নাকি এর বাইরেও কিছু করার পরিকল্পনা করছেন?
উত্তর: বাইরে কাজ করার সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই করবো। তবে যে সাঁওতাল ভাষা আমাকে পরিচিতি দিয়েছে সেই ভাষায় কাজ বন্ধ করবনা, এর পাশাপাশি অন্য কাজের প্রস্তাব পেলে অবশ্যই করবো।
প্রশ্ন: আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিকাশের ক্ষেত্রে সিনেমা কি একটা বড়ো মাধ্যম হতে পারে?
উত্তর: হ্যাঁ, অবশ্যই। আমাদের ভাষা আমাদের পরিচিতি হলেও অনেকেই আমাদের ভাষা সম্পর্কে এখনও জানেননা। আমাদের সমাজের রীতিনীতি ও আদবকায়দা নিয়ে সিনেমা বানানো হলে আমাদের সমাজের পরিচিতি আরও বাড়বে।
প্রশ্ন: ছবির যিনি প্রযোজক তিনি আপনাকে কতটা সাহায্য করেছেন?
উত্তর: তার কাছে অনেক সাহায্য পেয়েছি। সিনেমা বানাতে টাকা খুব প্রয়োজন এবং তিনি সেই টাকাটা দিয়েছেন বলেই সিনেমা টা বানানো সম্ভব হয়েছে, নাহলে হয়তো আমরা এরকম একটা ভালো সিনেমা পেতাম না।
প্রশ্ন: আদিবাসী সম্প্রদায়কে বৃহত্তর সমাজে মেলে ধরার জন্য এখনও কোন কোন বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়ে সিনেমা বানানো হলে ভালো হয় মনে হয়?
উত্তর: প্রথমে আমাদের সমাজ এবং তার নিয়মনীতি সম্পর্কে জানতে হবে। আদিবাসী সমাজের অনেকগুলো ভাগের মধ্যে আমাদের সাঁওতাল সমাজ একটা এবং বাকিদের থেকে আমাদের সবকিছুই অনেক আলাদা। প্রযোজকরা নিজেদের সখের জন্য সিনেমা বানাচ্ছেন কিন্তু সেই সিনেমা দেখার জন্য একটা হল পর্যন্ত নেই। এইসব সমস্যাগুলি দেখানো হল ভবিষ্যতে আমরা আরও ভালো সিনেমা বানাতে পারব।
প্রশ্ন: ভালো অভিজ্ঞতার কথা তো অনেক শুনলাম। কিন্তু এই সমাজে বা পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে কি কি খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন?
উত্তর: এটা শুধুমাত্র আমাদের সমাজ বলে নয়, অন্যান্য অনেক সমাজেই অনেক মেয়েদের মন্দ কথা শুনতে হয় নাচ, গান ইত্যাদি করার জন্য। রাত্রিবেলা দেরিতে বাড়ি ফিরছে, কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে যাচ্ছে এবং সবশেষে মেয়েটি ভালো না খারাপ! আমি নিজেও ছাড় পায়নি, আমাকেই শুনতে হয়েছে। তখন খুব খারাপ লাগতো কিন্তু এখন তারাই ভালো কথা বলছেন, এটা আমায়। অনেক বড়ো পাওনা।