Kanyakumari To Kashmir: স্বপ্ন ছিল বিশ্বরেকর্ডের! স্কেটিং করে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর যেতে গিয়ে মৃত্যু হল যুবকের

মহানগর বার্তা ওয়েবডেস্কঃ বিশ্ব রেকর্ড করে সবাইকে চমকে দেবেন, এই আশা নিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। লক্ষ্যের অনেকটা কাছেও পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই রেকর্ড তৈরির আগেই চিরদিনের মত চলে যেতে হল কেরলের আনাস হাজাসকে। স্কেটবোর্ডিং করে দেশের দক্ষিণতম প্রান্ত থেকে উত্তরতম প্রান্ত, অর্থাৎ কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর (Kanyakumari To Kashmir) গিয়ে পৌঁছবেন এটাই ছিল তাঁর স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন সফল করার খুব কাছে গিয়েও পৌঁছে যান এই কেরালিয়ান যুবক। কিন্তু রোড অ্যাক্সিডেন্ট (Accident) কেড়ে নিল তাঁর প্রাণ।
কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর (Kanyakumari To Kashmir) স্কেটবোর্ডিং করে পৌঁছেতে চেয়েছিলেন আনাস হাজাস। সেই লক্ষ্যে গত ২৯ মে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীরের (Kanyakumari To Kashmir) উদ্দেশ্যে রওনা দেন। লক্ষ্য ছিল ৩৭০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করবেন। সফলভাবে ৩১০০ কিলোমিটার এরও বেশি পথ পেরিয়ে গিয়েছিলেন। আর বড়জোর ৬০০ কিলোমিটারের মতো পথ পাড়ি দেওয়া বাকি ছিল। কিন্তু তার আগেই হরিয়ানায় (Haryana) পিছন থেকে আসা একটি ট্রাক তাঁকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি কেরলের (Kerala) এই যুবককে। আনাসের এই মর্মান্তিক পরিণতিতে তাঁর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের পাশাপাশি বহু মানুষ শোকস্তব্ধ। লক্ষ্যের খুব কাছে পৌঁছেও এভাবে যে তার জীবন থেমে যাবে তা কেউই মেনে নিতে পারছেন না।

নিজের শখের প্রতি অদ্ভুত ভালবাসা ছিল আনাস হাজাসের। তিনি ছিলেন পেশায় প্রযুক্তিবিদ। বাড়ি কেরলের রাজধানী তিরুবন্তপুরমে। প্রথমে সেখানকারী এক তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করতেন কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করা এই যুবক। পরবর্তীকালে সেই চাকরি ছেড়ে বিহারের একটি স্কুলে যোগ দেন আনাস। তিনি যে খুব ছোটবেলা থেকে স্কেটবোর্ডিং শিখেছেন এমন নয়। মূলত ইউটিউব ভিডিও দেখেই স্কেটবোর্ডিং করতে শুরু করেন। এইভাবেই হয়ে ওঠেন একজন দক্ষ স্কেটবোর্ডার। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কেটবোর্ডিংয়ে রীতিমতো আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন আনাস। রাত-দিন এই নিয়েই পড়ে থাকতেন। তাই বছর তিনেক আগে বিহারের স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন। লক্ষ্য ছিল স্কেটবোর্ডিং নিয়ে কিছু একটা করার।
চাকরি ছাড়ার পর আনাস হাজাস স্কেটবোর্ডিংয়ে নিজেকে আরও দক্ষ করে তুলতে শুরু করেন। নিজের প্র্যাকটিসের বিভিন্ন ভিডিও বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছাড়তেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় ছেলেপুলেদের স্কেটবোর্ডিং শেখানো শুরু করেন। তাঁর এই প্যাশন দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ফলোয়ার্সও হয়েছিল।
কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর (Kanyakumari To Kashmir), দীর্ঘ ৩৭০০ কিলোমিটার পর বাড়ি দিতে পারলে তা স্কেটবোর্ডিংয়ের ইতিহাসে বিশ্ব রেকর্ড হতো। কারণ এর আগে কেউ এতো দীর্ঘ পথ স্কেটবোর্ডিং করে যাননি। সেই রেকর্ড করার নেশাতেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন এই যুবক। বছর ৩১ এর আনাস পিঠের ব্যাগে নিয়েছিলেন শুধুমাত্র দু সেট জামা কাপড়। এছাড়া পরেছিলেন এক সেট স্পোর্টস শু, মাথায় হেলমেট এবং সঙ্গে ছিল সাধের স্কেটবোর্ডটি।
এইটুকু সম্বল করেই ঘন্টার পর ঘন্টা জাতীয় সড়ক ধরে স্কেটিং করতে করতে দেশের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে উত্তরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। রাত্রিবেলায় স্থানীয়দের কারোর একটা বাড়িতে থেকে যেতেন। তাঁর এই উদ্যম দেখে নতুন নতুন রাজ্যে অনেকেই স্বাগত জানাতেন আনাস হাজাসকে। প্রায় প্রতিদিন রাতে বিশ্রামের সময় নিয়ম করে তিনি যে জায়গায় আছেন সেখানকার আপডেট দিতেন। সেই জায়গার কোনও দ্রষ্টব্য স্থানের ছবিও দিতে দেখা গিয়েছে এই যুবককে।
শেষ আপডেটে জানিয়েছিলেন, তিনি হরিয়ানার আম্বালায় আছেন। সেখান থেকে কাশ্মীর (Kanyakumari To Kashmir) আর ৬০০ কিলোমিটারের মতো পথ। মানে আর দিন পনেরো পথ চললেই পৌঁছে যেতেন লক্ষ্যে। স্থানীয় মঞ্জি সাহিব গুরুদ্বারের ছবিও পোস্ট করেন।
মঙ্গলবার যখন হরিয়ানার পাঞ্চকুলা থেকে হিমাচলের নালাগড়ের দিকে যাচ্ছিলেন, সেই সময় কালকার কাছে তিনি দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু প্রাণে বাঁচানো যায়নি আনাস হাজাসকে।
কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর (Kanyakumari To Kashmir), এই দীর্ঘ পথ স্কেটবোর্ডিং করে সফলভাবে পাড়ি দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করার পরই নতুন লক্ষ্য কী হবে তা আগে থেকেই ঠিক করে ফেলেছিলেন আনাস। পরিজনদের জানিয়েছিলেন এরপর তিনি ভুটান, নেপাল ও কম্বোডিয়ায় স্কেটবোর্ডিং করবেন। এই দেশগুলোর পাহাড়ি পথে স্কেটিং করে তিনি নতুন নজির তৈরির স্বপ্ন দেখতেন। নিজের শখের প্রতি যে ভালোবাসা ও একাগ্রতা ছিল এই যুবকের তাতে সকলেই জানতেন আনাস ঠিক সফল হবেন। সেই সাফল্যের একেবারে দোরগড়ায় পৌঁছেও যান এই কেরালিয়ান যুবক। মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার আগে তাঁকে কোনও সমস্যাতেও তেমন একটা পড়তে হয়নি। ইউটিউব দেখে শিখলেও স্কেটবোর্ডিংয়ে তাঁর এতটাই নিয়ন্ত্রণ ছিল যে কখনোই নির্দিষ্ট লেন ছেড়ে রাস্তার মাঝে চলে আসতেন না। সেই তাঁরই এমন মর্মান্তিক পরিণতি মেনে নিতে পারছে না কেউ।
আনাস হাজাস অকালে চলে যাওয়ার সময় রেখে গেলেন মা শৈলা বেবি, বাবা আলিয়ারকুঞ্জি ও তিন ভাই বোনকে। তাঁর দেহ তিরুবন্তপুরমের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
আনাস আজাস অত্যন্ত কঠিন লক্ষ্য সামনে রেখে পথচলা শুরু করেছিলেন। ওই দুর্ঘটনা না ঘটলে হয়তো তিনি সফলও হতেন। তবে স্কেটবোর্ডিং বিশেষজ্ঞরা সবসময় সতর্ক করে দিচ্ছেন লক্ষ্য (Kanyakumari To Kashmir) বাছার ক্ষেত্রে। কারণ, আমাদের দেশে কিছু স্থানীয় জায়গা ছাড়া পায়ে হাঁটা বা সাইকেল চালানোর জন্য আলাদা কোনও পথ নেই। ফলে জাতীয় সড়কে দ্রুত গতিতে চলে যাওয়ার লরি, বাস, ট্রাকের মাঝখান দিয়ে স্কেটিং করা মোটেও উচিৎ কাজ নয় বলে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা, প্যাশন ভালো। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়া সাহসের পরিচয়। কিন্তু কখনই হঠকারিতা উচিৎ নয়। বাস্তবতাকে মাথায় রেখে লক্ষ্য স্থির করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।

