প্রতিকূলতাকে জয়, কেদারনাথে খামতি নেই ভক্তিতে

হিমালয়ের কোলে মন্দাকিনীর তীরে কেদারনাথ বরাবরই পূণ্যার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। আবহাওয়া প্রতিকূল, দুর্গম পথ- কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতিবছর দর্শনার্থীদের আনাগোনা লেগেই থাকে প্রায় ১১৭৫৫ ফুট উঁচু এই প্রাচীন শিবমন্দিরে। বস্তুত, ভারতে শিবভক্তির সূচনা প্রায় খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতকে। দক্ষিণ ভারতেই প্রথম শিবভক্তিচর্চা শুরু হয়েছিল।ভারতীয় শিব মন্দিরগুলোর মধ্যে গাড়োয়াল হিমালয়ের বুকে কেদারনাথ সম্ভবত দুর্গমতম। এই মন্দির সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকে এপ্রিলের শেষদিক থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। বছরের বাকি সময়টুকু আবহাওয়া সায় দেয় না একেবারেই। প্রতি শীতকালে কেদারনাথ মন্দির থেকে বিগ্রহগুলিকে উখিমঠ পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। উখিমঠের ওঙ্কারেশ্বর মন্দিরে পরবর্তী ছ-মাস বিগ্রহের পুজো হয়। শীতকালীন এই প্রবাসের পর ফের উখিমঠ থেকে কেদারনাথে তা ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। বলা বাহুল্য, মন্দিরের এই পরম্পরাটি ভক্তদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।
পরম্পরা অনুযায়ী উখিমঠ থেকে কেদারনাথ পর্যন্ত বিগ্রহের এই ডোলি যাত্রা, পথে দু-বার বিশ্রাম করে। সাধারণত প্রথম দিন ডোলি গুপ্তকাশী হয়ে ফাটায় এবং দ্বিতীয় দিন গৌরীকুন্ডে বিশ্রাম করে অবশেষে তৃতীয় দিনে কেদারনাথে পৌঁছায়। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই ডোলি যাত্রায় পদব্রজে সামিল হন অসংখ্য ভক্ত ও পূণ্যলোভী মানুষ। উৎসবের আমেজে ডোলি এগিয়ে চলে মূল গন্তব্যের দিকে। প্রায় ৬০ কিলোমিটারের এই সম্পূর্ণ যাত্রা সম্পন্ন হয় মিলিটারির তত্ত্বাবধানে। যাত্রাপথ অত্যন্ত দুর্গম, এমনকি পথে খরস্রোতা মন্দাকিনীও পার হতে হয়। তবু কখনো কেদারনাথ যাত্রায় ভক্তদের উৎসাহে ভাঁটা পড়ে না। খালি পায়ে হেঁটে তাঁরা ডোলির সঙ্গে উখিমঠ থেকে কেদারনাথ পৌঁছোন।
ভগবান কেদারনাথের আশীর্বাদেই এই দুর্গম যাত্রার শক্তি পান বলে মনে করেন তাঁরা। দু-ধারে প্রায় দশ-বারো ফুট বরফের চাইয়ের মাঝে সরু রাস্তা- গাড়ি তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটেই যেখানে যাওয়া কষ্টকর, সেই রাস্তা দিয়ে খালি পায়ে শতাধিক মানুষ হেঁটে যান অবলীলায়।
কেদারনাথে পৌঁছে ডোলির সঙ্গেই ভক্তরা মন্দির পরিক্রমা করেন। পরদিন মন্দিরের কপাট খুললে ডোলি যাত্রা সম্পন্ন হয়। খ্রিস্টীয় চোদ্দ-পনেরো শতকে দক্ষিণ ভারতে যে শিব ভক্তির উৎপত্তি, আজ একুশ শতকে দাঁড়িয়ে উত্তর ভারতীয় মন্দিরে তার এই বিস্তার সত্যিই বিস্মিত করে।