
মহানগর বার্তা ওয়েবডেস্কঃ নিজের স্বপ্ন সফল করতে মানুষ যেতে পারেন অনন্ত পথ। আর যদি স্বপ্ন হয় Ladakh যাওয়ার, তাহলেও পকেটের তাড়নায় পায়ে হেঁটেই Ladakh (লাদাখের) উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে দেন কেউ কেউ। শুনে অনেকেই ভাবতে পারেন পাগলের কারবার। কিন্তু এই পাগলামির পিছনে থাকে নিহের গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার অসীম আকাঙ্খা। মূল্যবৃদ্ধি চরমে। তাই বলে Ladakh (লাদাখ) যাওয়ার স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে তা হয় না। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যেই তখন ভরসা দুই পা। দুই পা সম্বল করেই অনিশ্চিতের পথে বেড়িয়ে পড়া। উপহাস, টিটকারি সহ্য করেও, শত বিঘ্নকে উপেক্ষা করে গন্তব্যে পৌঁছানোর জেদ অটুট। বাঁকুড়ার মিলন মাঝি থেকে Chandannagar ( চনন্দনগরের) জিতের জীবনে এমনই স্বপ্ন সফলের তাড়না পথ হাঁটিয়েছে তাঁদের। গত মে মাসেই পায়ে হেঁটে ৮৩ দিনের মাথায় লাদাখ পৌঁছে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন হুগলির সিঙ্গুরের মিলন মাঝি। এবার মিলনের থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে পায়ে হেঁটে Ladakh ( লাদাখের) উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন Chandannagar (চনন্দনগরের) জিৎ।

চনন্দনগর পুরনিগমের ২৭ নং ওয়ার্ডের অ্যাঙ্গাস এলাকার গৌরহাটি অঞ্চলে বাড়ি প্রসেনজিৎ পাল ওরফে সবার প্রিয় জিতের (Jeet)। পেশায় গিগ শ্রমিক, জিতের নেশা বাইক চড়ে দূরে পাড়ি দেওয়ার। একটি অনলাইন খাদ্য সরবরাহকারী কোম্পানিতে কাজের সুবাদে সারাদিন বাইকে করে ঘুরতে হয় তাঁকে। আর এটাই বাইকের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং নেশার জন্ম দিয়েছে। এর আগেও বাইকে চেপে তিনি দূরের পথ পাড়ি দিয়েছেন। বাইক নিয়ে ইতিমধ্যেই ঘুরে এসেছেন সিকিমের গুরুদাংমার, দার্জিলিং। এবার ইচ্ছা ছিলো লাদাখ যাওয়ার। কিন্তু জিৎ (Jeet) জানাচ্ছেন, তেলের দাম অগ্নিমূল্য। তাঁর পেশায় যা বেতন, তাতে এতোটা পথ পাড়ি দেওয়ার বাইকের তেল খরচ কুলাবে না তাঁর। সাধ থাকলেও, সাধ্য নেই বাইকের তেল খরচ যোগার করার। অগত্যা তাই বাইকের নেশা ছেড়ে দুই পায়েই ভরসা রাখছেন চনন্দনগরের প্রসেনজিৎ পাল ওরফে জিৎ (jeet)।

সোমবার ভোরে হাওড়া ব্রিজ থেকে পায়ে হেঁটে (By walking) তাঁর যাত্রা শুরু করেছেন জিৎ (Jeet)। কলকাতা থেকে লাদাখের দূরত্ব প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার। এতোটা পথ পায়ে হেঁটেই (By walking) পাড়ি দেবেন তিনি। Chandannagar ( চনন্দনগরের) ছেলে জিতের Ladakh (লাদাখ) পৌঁছানোর কথা নব্বই দিনের মাথায়।

এই দুঃসাহসিক অভিযানে শুধুমাত্র নিজের স্বপ্ন পূরণ করাই একমাত্র লক্ষ নয় জিতের (Jeet) এর। সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয়ও দিচ্ছেন জিৎ। এই সুদীর্ঘ যাত্রাপথে প্লাস্টিক বর্জন ও পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দিতে দিতে যাবেন তিনি।
পায়ে হেঁটে (By walking) লাদাখ যাওয়ার ( way to ladakh) এই সিদ্ধান্তের পিছনে তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছেন বাকুড়ের মিলন মাঝি, এমনটাই জানিয়েছেন জিৎ। একটি প্রথম সারির বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে Chandannagar র জিৎ বলেছেন, “খাবার ডেলিভারির কাজ করে তেলের দাম যোগানো সম্ভব নয়। স্বপ্নপূরণ করতে তাই হেঁটে যাওয়াই স্থির করেছি। এরক আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা থেকে হেঁটে ৮৩ দিনের মাথায় লাদাখ পৌঁছেছিলেন সিঙ্গুরের মিলন মাঝি। তাঁকে দেখেই আমি উৎসাহ পেয়েছি।”
প্রথম সারির ওই দৈনিকের অনলাইন সংস্করণে জিতের এই দুঃসাহসিক অভিযানের সংবাদ প্রকাশ হতেই, তাঁকে অভিনন্দনে ভরিয়ে দিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমের অধিবাসীরা। পল্লব পল্লব নামে একজন লিখেছেন “তোমার পায়ে আমার প্রণাম, আমরা বাইক ছাড়া একবিন্দু চলতে পারিনা, তুমি পায়ে পায়ে লাদাখ, অনেক শুভকামনা রইল”। সাহিনূর আলম লিখেছেন “সুস্থ ভাবে, লক্ষ্যে পৌঁছাও l শুভ কামনা রইলো”। সঞ্জয় দে নামে একজন লিখেছেন, “মন ভালো করার মত খবর….. উৎসাহ পেলাম”। তবে শুধুই শুভেচ্ছা বার্তা নয়। অনেকে কটাক্ষও করেছেন এই অভিযানকে। একজন আবার এই ঘটনাকে সামনে রেখে নিশানা করেছে মূল্যবৃদ্ধিকে। আল আমিন নামে একজন লিখেছেন, “পকোটে শুধু ওনার না পুরো ভারতবাসী হাঁটা শুরু করবে যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে”।

কিন্তু কটাক্ষ হোক বা অভিনন্দন, থেমে নেই জিতের হাঁটা। তিনি হাঁটছেন তাঁর স্বপ্ন পূরণে। এই বছরেরই গত মে মাসে হুগলির সিঙ্গুরের ছেলে মিলন মাঝি পায়ে হেঁটে Ladakh (লাদাখ) পাড়ি দেন। ৮৩ দিনের মাথায় তিনি Ladakh (লাদাখ) পৌঁছান। মিলনেরও শখ ছিলো বাইকে করে লাদাখ যাওয়ার। কিন্তু লকডাউনে কাজ চলে যায় মিলনের। তখন বাবার চায়ের দোকানেই, বাবাকে সাহায্য করা শুরু করে মিলন। এউ আর্থিক অনটনে বাইক কেনার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। কিন্তু নিজের জেদকে সম্বল করে লাদাখ যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করে ফেলেন মিলন। পায়ে হেঁটেই ৮৩ দিনের মাথায় তিনি লাদাখ পৌঁছান।
Chandannagar র মিলনের বাবা অনিল মাঝির কথায় “আমি জানতাম যে ছেলে রানীগঞ্জে একটা কারখানায় কোনও একটা কাজ খুঁজতে যাচ্ছে। পরে ফেসবুকে ছবি দেখে জানতে পারি যে ছেলে Ladakh ( লাদাখ )যাচ্ছে। Ladakh (লাদাখে) গিয়ে ছেলে আমাকে ফোন করেছিলো। ছেলের স্বপ্ন পূরণে আমি খুবই গর্বিত।”

মিলনের মা চন্ডি মাঝি বলেন “ছেলে লাদাখে গিয়ে বরফে জাতীয় পতাকা পুঁতে দেওয়ার পরেই আমার বুকটা গর্বে ভরে গেছিলো।” তাঁর মা আরো জানান, “যখন ফেসবুকে ছেলের লাদাখ যাওয়ার কথা লোকজন জানতে পারলো, তখন অনেকেই ছেলেকে পাগল বলেছিলো।”
সেই মিলনের থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন হুগলির চনন্দনগরের বাসিন্দা জিৎ। নিজের স্বপ্ন পূরণ আর পরিবেশ সচেতনতা ও প্লাস্টিক বর্জনের বার্তা নিয়ে পায়ে হেঁটে Ladakh (লাদাখ) পাড়ি দিয়েছেন তিনি।”

