মানবিক দেশ! বিয়ের আগে দুর্ঘটনায় পঙ্গু স্ত্রীকেই সসম্মানে ঘরে তুললেন স্বামী

মহানগরবার্তা ওয়েবডেস্ক: ধর্ষণ হোক বা তথাকথিত নিম্নবর্ণের প্রতি অত্যাচার, গত কয়েক মাস ধরে এই ধরণের ঘটনায় বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে উত্তরপ্রদেশ। তবে উত্তরপ্রদেশ মানে কি শুধুই অপরাধ আর নিষ্ঠুরতা? তা হয় তো নয়। এবার উত্তর প্রদেশের বুকেই তৈরি হল ভালোবাসার মহৎ দৃষ্টান্ত।
বিয়ের মাত্র কয়েক ঘন্টা আগেই দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে পড়েছিলেন ভাবী স্ত্রী, কিন্তু তাতে বিয়েতে কোনোরকম বাঁধা পড়ে নি। ভালোবাসার জোরেই পঙ্গু স্ত্রীকে সম্মানে গ্রহণ করেছেন উত্তর প্রদেশের যুবক অবধেশ। ঘটনা সামনে আসতে ওই যুবকের কীর্তিকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলেই।
ঠিক কী হয়েছিল? জানা গেছে, উত্তর প্রদেশের প্রতাপগড়ের কুন্ডা এলাকার বাসিন্দা আরতি মৌর্যের বিয়ে ঠিক হয়েছিল পাশের গ্রামের অবধেশের সঙ্গে। ৮ তারিখ তাঁদের বিয়ের কথা ছিল। কিন্তু বাধ সাধে দুর্ঘটনা। সেদিনই বেলা একটা নাগাদ একটি শিশুকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ছাদ থেকে পড়ে যান আরতি। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় তাঁর শিরদাঁড়া। কোমর, পা সমেত শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও ভয়াবহ চোট লাগে। বিয়ের আমেজ মুহূর্তে বদলে যায় বিষাদের সুরে।
আরতিকে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করা হয় প্রয়াগরাজের এক হাসপাতালে।চিকিৎসকরা জানান, আরতি পঙ্গু হয়ে গিয়েছেন, বেশ কয়েক মাস বিছানা থেকে নড়তে পারবেন না। এমনকী চিকিৎসার পরেও তাঁর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম। ফলে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এমনকি আরতির বাড়ির লোকেরা আরতির বোনকে বিয়ে করার জন্য অবধেশের কাছে প্রস্তাব দেন।
কিন্তু আরতিকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা ভাবতেই পারেননি অবধেশ।হাসপাতালে গিয়ে ভাবী স্ত্রীর সেবায় লেগে যান তিনি। স্পষ্টই জানিয়ে দেন, তিনি আরতিকেই বিয়ে করবেন। বিয়ের যে লগ্ন ঠিক ছিল, সে সময়েই হবে অনুষ্ঠান। তাঁর জেদের কাছে হার মানেন চিকিৎসকরা। ঘণ্টাদুয়েক পর অ্যাম্বুলেন্সে আরতিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। স্ট্রেচারে শুয়ে, অক্সিজেন, স্যালাইন চলাকালীনই তাঁকে সিঁদুর পরান অবধেশ। হয় যাবতীয় অনুষ্ঠানও। শুধু শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার বদলে আরতিকে আবার নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
আরতি অবধেশের সেই বিয়ের পর কেটে গেছে এক সপ্তাহ। কিন্তু হাসপাতালেই স্ত্রীর পাশে দিনরাত পড়ে আছেন ওই যুবক। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এখনও অন্তত ২ সপ্তাহ আরতিকে হাসপাতালে থাকতে হবে, আগামী বেশ কয়েক মাস বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবেন না।