ডাইনি’ অপবাদ! বাঘাযতীনের ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণের মুখে মৃত স্বামীর স্ত্রী

মহানগর বার্তা ওয়েবডেস্ক:আঠারো-উনিশ শতকের চৌকাঠ পেরিয়ে একুশ শতকে এসে পড়েছে সভ্যতা। কিন্তু মানুষের মন থেকে আজও উনিশ শতক মুছে গেছে কি? যে উনিশ শতকে সমাজের মেয়েদের মৃত স্বামীর চিতায় তুলে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হত, আজও হয়তো তথাকথিত প্রগতিশীল সমাজে কোথাও কোথাও রয়ে গেছে সেই একই মানসিকতা। অন্তত এদিনের ঘটনা প্রমাণ করে তেমনটাই।
গতকালই সামনে এসেছিল দক্ষিণ শহরতলির বাঘাযতীন এলাকার মর্মান্তিক ঘটনার কথা। বিয়ের পর বউভাতের দিন সকালেই মৃত্যু হয়েছিল নতুন বরের। প্রথম দিকে আত্মহত্যার কথা থাকলেও, পরে জানা যায় তিনি অসুস্থ হওয়ার কারণেই ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা। গতকালের সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় করেছিল এই খবর, আর আজই সামনে এল দুর্ভাগা সেই সদ্য বিধবা মেয়েটির প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার আচরণ।
এদিন সোশ্যাল মিডিয়ার একাংশ বিয়ের পরপরই বাঘাযতীনের ওই যুবকের মৃত্যুর জন্য দায়ী করে তাঁর সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে।মেয়েটির দুর্ভাগ্যের কারণেই যে বিয়ের এক দিনের মাথায় স্বামীকে হারিয়েছে সে, স্পষ্ট জানানো হয় সেকথা। শুধু তাই নয়, মেয়েটিকে ‘অপয়া’, ‘রাক্ষুসী’, এমনকি ‘ডাইনি’ অপবাদে দেগে দিতেও দ্বিধা করে না নেটিজেনদের একাংশ। বস্তুত কিছু মানুষের মন্তব্য দেখে বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয় যে আমরা দাঁড়িয়ে আছি ২০২০ সালের সমাজে, দাঁড়িয়ে আছি একজন নারী পরিচালিত রাজ্যের মাটিতে।
ঠিক কী কী বলেছেন নেটিজেনরা?বস্তুত, সম্প্রতি ফেসবুকে মেয়েদের শাড়ি পড়া নিয়ে ভাইরাল হয়েছে একটি ট্রেন্ড, ‘শাড়িতেই নারী’। শাড়িতে ট্র্যাডিশনাল সাজে মেয়েদের দেখতে সুন্দর লাগে, এটাই ট্রেন্ডের মূল কথা। কিন্তু বাঘাযতীনের ঘটনার পর ফেসবুকে সেই ট্রেন্ডের বিকৃতি করে কেউ কেউ বলছেন, “শাড়িতে অপয়া রাক্ষুসী নারীও হয়!” স্বামীহারা সেই মেয়েটির উদ্দেশ্যে অনায়াসে ধেয়ে আসছে, “খেয়ে নিল ছেলেটাকে” গোছের মন্তব্যও। যদিও এই ধরণের নীচ মানসিকতার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই গর্জে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাংশ। তবু বাঘাযতীনের ঘটনা যে একুশ শতকের সমাজের রূপটা আরো একবার আমাদের চোখের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরল, তা বলাই বাহুল্য।