বাবা গরীব দুধ বিক্রেতা, গোয়ালে বসে পড়াশোনা করেই আইনি পরীক্ষায় প্রথম তরুণী

মহানগরবার্তা ওয়েবডেস্ক: মনের জোর আর ইচ্ছে থাকলে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মানুষ নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। কোনো কিছুই তাকে আটকাতে পারে না। এদিন আরো একবার সেই কথাই প্রমাণ হয়ে গেল। রাজস্থানের মেয়ে সোনাল শর্মার কাহিনী যে নিঃসন্দেহে দেশের তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে তা বলাই বাহুল্য।
রাজস্থানের উদয়পুরের বাসিন্দা সোনাল শর্মা। তাঁর বাবা পেশায় একজন দুধ বিক্রেতা। বাড়ি বাড়ি দুধ বেচে কোনোরকমে সংসার চালান তিনি। সেই দুধওয়ালার মেয়ে সোনাল শর্মাই মাত্র ২৬ বছর বয়সে আজ হতে চলেছেন রাজস্থানের আদালতের বিচারক। নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে তিনি বাঁধা হতে দেন নি দারিদ্র্যকে। জীবনে সফল হওয়ার অদম্য ইচ্ছের কাছে তুচ্ছ হয়ে গেছে সমস্ত দারিদ্র্য।
জানা গেছে, রাজস্থান জুডিশিয়াল সার্ভিসের (RJS) পরীক্ষা পাশ করেছেন সোনাল শর্মা। সারাজীবন ধরে গোয়াল ঘরে গোরুদের মধ্যে বসেই চলেছে তাঁর পড়াশোনা। শুধু তাই নয়, সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিএ (BA) , এলএলবি (LLB) এবং এলএলএমের (LLM) আইনি পরীক্ষা গুলিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন উদয়পুরের সোনাল শর্মা।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী সোনাল শর্মাকে রাজস্থানের একটি সেশন আদালতে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ করা হবে।
দুধ বিক্রেতা হিসেবে সোনালের বাবার কখনোই টিউশন পড়ানোর সামর্থ্য ছিল না। আইনি পরীক্ষার জন্য যে সমস্ত দামী বই দরকার হয় তাও জোগাড় করতে পারেন নি তিনি। তবু মেয়ের পড়াশোনায় উৎসাহ দিয়ে গেছেন ষোলআনা। সোনালও দমে যাওয়ার পাত্রী নয়। রোজ কলেজ শুরু হওয়ার আগেই সাইকেল চালিয়ে সে পৌঁছে যেত কলেজের লাইব্রেরিতে। সেখানে বসেই পড়াশোনা করতো।
অবশ্য ঘরের কাজেও কখনো গাফিলতি করে নি সোনাল শর্মা। গোয়ালের গোরুদের দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর। ফলে গোয়ালেই বই খাতা নিয়ে পড়াশোনা করতো সে। সেই সঙ্গে গোরুদের খেয়ালও রাখতো। মেয়ের পড়াশোনা চালানোর জন্য ব্যাঙ্ক থেকে লোনও নিয়েছিলেন সোনাল শর্মার বাবা মা। তাঁর কথায়, “বেশিরভাগ সময়েই আমার চটিতে গোবর লেগে থাকতো। কলেজে আমি নিজের পরিচয় দিতে লজ্জা পেতাম। কিন্তু এখন আমি আমার মা বাবাকে নিয়ে গর্বিত।” সোনাল শর্মার মতো মেয়েই ভারতের লক্ষ লক্ষ গরীব ছেলে মেয়ের স্বপ্ন সফলের প্রেরণা।