
মহানগর বার্তা ওয়েবডেস্কঃ উত্তরপ্রদেশের হাথরস গণধর্ষণকাণ্ডে নতুন মোড়। নির্যাতিতা মৃত তরুনীর বাবাকে দিয়ে জোর করে মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। নির্যাতিতা তরুণীর বাবা আজ বলেছেন প্রশাসনের পদক্ষেপে তাঁরা সন্তুষ্ট, তাই কোনো আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। তদন্তকারী দল তাদের বাড়িতে এসে বলে গেছে সাত-দশ দিনের মধ্যেই তারা তদন্ত সম্পূর্ণ করে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে রিপোর্ট জমা দেবে। এই প্রসঙ্গে বিরোধীদের অভিযোগ রাতের অন্ধকারে পুলিশ নির্যাতিতা তরুণীর বাবাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভয় দেখিয়ে জোর করে এই মুচলেকা লিখিয়ে নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে চাপে ফেলতে মাঠে নেমে পড়েছে বিরোধী শিবির। কংগ্রেস সূত্রে খবর আজ হাথরস যাচ্ছেন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা বডঢ়া। তবে ইতিমধ্যেই হাথরসে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জেলাশাসক পি লস্কর।
নির্যাতিতার পরিবারের অমতে রাতের অন্ধকারে সৎকারের অভিযোগকে ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। পরিষ্কার ভাষায় নির্যাতিত তরুনীর পরিজনেরা জানিয়েছেন রাত্রিবেলায় তাদের পরিবারের সবাইকে বাড়ির মধ্যে জোর করে আটকে রেখে প্রায় ৩০-৪০ জন পুলিশ তরুণীর বাবাকে সৎকারের জন্য তাদের সঙ্গে যেতে বাধ্য করে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় পুলিশ সুপারের বক্তব্য নির্যাতিতার দেহে পচন ধরায় পুলিশ বাধ্য হয়েছে রাত্রিবেলায় এই সৎকার করতে। তবে পুলিশের বক্তব্য পরিবারের অনুমতি নিয়েই সৎকার করা হয়েছে। যদিও অনুমতির কথা সম্পূর্ণ খারিজ করে দিয়েছিল নির্যাতিতার পরিজনেরা। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আজ সকালে নির্যাতিতার বাবার সম্পূর্ণ উল্টো বয়ান যোগী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট করতে ও উচ্চবর্ণের অভিযুক্তদের আড়াল করতেই রাতের অন্ধকারে এই তড়িঘড়ি অন্তষ্টির আয়োজন। একইসঙ্গে কংগ্রেস সহ বিরোধীদের অভিযোগ রাহুল-প্রিয়াঙ্কাকে আটকানোর জন্যই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে হাথরসে, যাতে তারা নির্যাতিতার পরিবারের কাছে পৌঁছাতে না পারে। বিরোধীদের অভিযোগ এই ভাবেই নির্যাতিতার পরিবারকে ভয় দেখিয়ে তাদের ন্যায় পাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে নির্যাতিতা মৃত তরুনীর পরিবার সবচেয়ে কঠিন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। পরিষ্কার ভাবেই বোঝা যাচ্ছে তাদের ওপর রাজ্য প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের চাপ প্রবল আকার ধারণ করেছে। উত্তর প্রদেশ প্রশাসন মৃত তরুনীর পরিবারকে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন গুলির সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে চলেছে বলেই ধারণা।
এরকম নৃশংস ঘটনার প্রেক্ষিতে মনস্তত্ত্ববিদদের মতে উত্তরপ্রদেশের মত রাজ্যে প্রবল পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাই এদের বর্বর আচরণ করতে প্রলুব্ধ করে তুলছে বারে বারে। এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন উত্তরপ্রদেশে সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষরাই যেহেতু বিজেপির স্বাভাবিক “বন্ধু”, তাই যোগী সরকার আদৌ কতটা কড়া পদক্ষেপ নেবে সে নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। তাইতো আজ উত্তরপ্রদেশ “ধর্ষণ প্রদেশে” পরিণত হয়েছে বলে নেট-নাগরিকদের একাংশের বক্তব্য !